Trump's Tariff Policy

ট্রাম্পের শুল্কনীতি: বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য হুমকি? ট্রেডারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিক।

ট্রাম্পের শুল্কনীতি: বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য হুমকি? ফরেক্স ট্রেডারদের জন্য সম্ভাব্য সুযোগ এবং ঝুঁকি

বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি এক নতুন আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। বিশেষভাবে কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক নতুন রূপ নিয়েছে। এই পরিবর্তন বৈশ্বিক শেয়ারবাজার এবং মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এখানে, আমরা ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাব, ফরেক্স ট্রেডারদের জন্য সম্ভাব্য সুযোগ এবং ঝুঁকি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সম্পর্কের নতুন দিক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ হলেও, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতি এই সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছে। ২০২১ সালে ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা করেছে যে কানাডার পণ্যের উপর ১৫৫ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার শুল্ক আরোপ করা হবে। এর মধ্যে প্রথম ৩০ বিলিয়ন ডলারের শুল্ক অবিলম্বে কার্যকর হবে, বাকি ১২৫ বিলিয়ন ডলারের শুল্ক কার্যকর হবে ২১ দিনের মধ্যে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই শুল্কনীতির বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন এবং পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে কানাডার মুদ্রা (CAD) ব্যাপক চাপে পড়তে পারে, যা ফরেক্স ট্রেডারদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সঙ্কেত হতে পারে। শুল্কের কারণে কানাডার বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ কমে যেতে পারে, যা CAD/USD পেয়ারটি দুর্বল করার সম্ভাবনা সৃষ্টি করে।

চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধ

চীনের ওপর ১০% শুল্ক আরোপের পর, বেইজিং সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (WTO) ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা করছে। চীনের অর্থনীতি রপ্তানিনির্ভর হওয়ায়, এই শুল্কনীতি দেশের উৎপাদন খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশেষভাবে, চীনের বৃহত্তম স্টক মার্কেট ইন্ডেক্স FTSE China A50 ইতোমধ্যে ০.৪৪% কমেছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। ফরেক্স ট্রেডারদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচনা। চীনের মুদ্রা (CNY) দুর্বল হলে, ইউএসডি/সিএনওয়াই (USD/CNY) পেয়ারে বড় মুভমেন্ট দেখা যেতে পারে। এর সাথে, চীনের উৎপাদন হ্রাসের কারণে অস্ট্রেলিয়ান ডলার (AUD) এবং নিউজিল্যান্ড ডলার (NZD) চাপের মধ্যে পড়তে পারে, কারণ এই দেশগুলোর অর্থনীতি চীনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত।

বৈশ্বিক শেয়ারবাজারের প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে অস্থিরতা দেখা গেছে।

  • মার্কিন বাজার: ডাও জোন্স (US30) ০.৭৫% কমেছে, S&P500 (US500) ০.৫০% কমেছে এবং নাসডাক (US100) ০.১৪% কমেছে।
  • ইউরোপীয় বাজার: জার্মানির DAX (DE40) ০.০২% বেড়েছে, ফ্রান্সের CAC 40 (FR40) ০.১১% বেড়েছে, স্পেনের IBEX 35 (ES35) ০.৪১% কমেছে।
  • এশিয়ান বাজার: জাপানের Nikkei 225 (JP225) ২.৫৯% কমেছে, হংকংয়ের Hang Seng (HK50) ০.৯১% বেড়েছে।

এই ধরনের মুভমেন্ট ফরেক্স মার্কেটেও প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি বিনিয়োগকারীরা মার্কিন ডলার (USD) কে সেফ হেভেন হিসেবে বেছে নেয়, তবে ইউএসডি ইন্ডেক্স শক্তিশালী হতে পারে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি

ফরেক্স ট্রেডারদের জন্য কৌশল

১. CAD/USD পেয়ার মনিটর করা: কানাডার ওপর শুল্ক আরোপের কারণে CAD দুর্বল হতে পারে, ফলে ইউএসডি/সিএডি (USD/CAD) পেয়ারটি লং পজিশনে ট্রেড করার জন্য একটি ভালো সুযোগ হতে পারে।

২. চীনের অর্থনৈতিক রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করা: চীনের অর্থনীতি যদি দুর্বল হতে থাকে, তবে ইউএসডি/সিএনওয়াই পেয়ারে বড় মুভমেন্ট দেখা যেতে পারে।

৩. অস্ট্রেলিয়ান ও নিউজিল্যান্ড ডলার নিয়ে সতর্ক থাকা: চীনের উৎপাদন হ্রাসের কারণে AUD/USD এবং NZD/USD পেয়ারে দুর্বলতা আসতে পারে।

৪. সেফ হেভেন সম্পদগুলোর দিকে নজর দেওয়া: মার্কিন ডলার (USD) এবং সোনার (Gold) চাহিদা বাড়তে পারে, ফলে ফরেক্স এবং গোল্ড ট্রেডারদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্কনীতি বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। কানাডা, মেক্সিকো এবং চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধ ফরেক্স ট্রেডারদের জন্য নতুন সুযোগ এবং ঝুঁকি তৈরি করছে। ফরেক্স ট্রেডারদের জন্য CAD, CNY, AUD, NZD, এবং USD মুদ্রাগুলি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হতে পারে। তাই ফরেক্স ট্রেডারদের উচিত এসব মুদ্রা ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক আপডেট নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা এবং সঠিক কৌশল গ্রহণ করা।


মার্কিন ডলারের মিশ্র প্রতিক্রিয়া: ফেড সুদের হার কমানোর ইঙ্গিতের পর ফরেক্স ও শেয়ার মার্কেটের প্রতিক্রিয়া

মঙ্গলবার মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের একাধিক কর্মকর্তার বক্তব্যের পর ফরেক্স বাজারে ডলারের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ফেড কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ২০২৪ সালের শেষের দিকে সুদের হার কমে যেতে পারে, যা মার্কিন ডলারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।

মূল বিষয়গুলো:

  • ডলারের পতন: ফেডের বক্তব্যের পর ডলার ইনডেক্স (DXY) ১০৩.২০ লেভেল পর্যন্ত কমেছে।
  • ইউরো ও পাউন্ড শক্তিশালী: ইউরো (EUR/USD) ও পাউন্ড (GBP/USD) ডলারের বিপরীতে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
  • সোনা ও ক্রিপ্টো: কম সুদের হার প্রত্যাশার কারণে সোনার (XAU/USD) ও বিটকয়েনের (BTC/USD) দাম বেড়েছে।
  • ইকুইটি মার্কেট: স্টক মার্কেট সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ বিনিয়োগকারীরা ফেডের পরবর্তী পদক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছে।

ট্রেডারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিক:

ফেড যদি সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তবে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী ট্রেডারদের কৌশল পরিবর্তন করতে হতে পারে। স্বল্পমেয়াদে, মার্কিন ডলার দুর্বল হতে পারে, যা গোল্ড, ইউরো এবং অন্যান্য প্রধান মুদ্রার জন্য ইতিবাচক হতে পারে।

করণীয়:

  • ফরেক্স ট্রেডারদের উচিত মার্কিন অর্থনৈতিক তথ্য (CPI, NFP) এবং ফেডের পরবর্তী বিবৃতিগুলোর প্রতি নজর রাখা।
  • গোল্ড এবং ক্রিপ্টো ট্রেডারদের জন্য এটি একটি সম্ভাব্য বুলিশ সিগনাল হতে পারে।
  • ফরেক্স ফ্যাক্টরি, Myfxbook-এর মতো অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ নিউজ ট্র্যাক করুন।

 


ট্রেডারদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। সতর্ক থেকে ট্রেডিং পরিকল্পনা করুন এবং বাজারের পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিন।

রানা দাশ, CEO, Forex Wave Expert

 

ফরেক্স ট্রেডিং, মার্কিন ডলার, ফেডারেল রিজার্ভ, সুদের হার, ফরেক্স বিশ্লেষণ, গোল্ড প্রাইস, ফরেক্স নিউজ, forextrading, usdollar, interest rates, goldprice, forexanalysis, forexnews

Tags: No tags

Add a Comment

You must be logged in to post a comment