ট্রেডিং সেশন (Trading Session)
এখন আপনি জানেন ফরেক্স কি, কেন ট্রেড করা উচিত এবং কিভাবে ফরেক্স মার্কেট পরিচালিত হয়। এবার দেখা যাক, কখন ট্রেড করা যায়।
এটা সত্য যে, ফরেক্স মার্কেট ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সব সময়েই মার্কেট মুভ করে এবং ট্রেড উপযোগী থাকে। আপনি তখনই ট্রেড করা উচিৎ যখন মার্কেট মুভমেন্টস আছে যেখানে আপনার মনে হচ্ছে ট্রেড করলে লাভবান হতে পারবেন। কিন্তু যখন মার্কেট বেশি মুভ করবেনা তখন ট্রেড করা আপনার জন্য কঠিন হতে পারে আবার অনেক বেশি হাই মুভমেন্টে ও ট্রেড করা টা রিস্কি।
এমন কিছু সময় আছে যখন মার্কেটে লিকুইডিটি থাকে না তখন একবারেই প্রাইস মুভ বন্ধ হয়ে থাকে। তাই কোন সময় গুলোতে মার্কেট মুভ বেশি থাকে এবং কোন সময় গুলো করার উপযোগী তা আমরা জানবো।
### মার্কেটের সময়সূচী (Market hours)
২৪ ঘন্টার এই মার্কেট কিভাবে পরিচালিত হয় সেটি আগে আমাদের জানতে হবে। ফরেক্স মার্কেটে ৪টি ট্রেডিং সেশন হয়। নিম্নের টেবিলটি দেখুন:
লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন যে, দুটি ট্রেডিং সেশনের এক পর্যায়ে দুটি মার্কেট খোলা থাকে। সাধারণত ঐসব হলো ব্যস্ততম সময়, কারণ সেখানে অনেক ভলিউম ট্রেড হয় যখন দুটি মার্কেট একই সময়ে খোলা থাকে। মার্কেটের সকল অংশগ্রহণকারী কাজকর্মে লিপ্ত হয় যার মানে অনেক অর্থ আদান প্রদান হয়।
এখন আপনি হয়তো সিডনির ওপেনের দিকে নজর দিয়েছেন আর চিন্তা করছেন যে এটা ২ ঘণ্টা শিফট করেছে কেন। চিন্তা করতে পারেন যে সিডনি ওপেন ১ ঘণ্টা পিছিয়ে যাবে যখন US তাদের সময় ১ ঘণ্টা পিছিয়ে নেয়, কিন্তু মনে রাখবেন যখন US তাদের সময় ১ ঘণ্টা পিছিয়ে নেয় তখন সিডনি ১ ঘণ্টা সামনে যায় (অস্ট্রেলিয়াতে ঋতু উল্টা)।
মেজর ট্রেডিং সেশনগুলোতে গড়ে কত পিপ উঠানামা করে তা নিচে এভারেজ হিসেবে দেয়া হলো:
উপরে দেখতে পারছেন ইউরোপিয়ান সেশনে সবচেয়ে বেশি পিপ উঠানামা করে। এখন প্রতিটি সেশন বিস্তারিতভাবে দেখি।
## টোকিও সেশন (Tokyo Session)
টোকিও সেশন ভোর ৫টায় শুরু হয় এবং দুপুর ১টায় শেষ হয়। টোকিও সেশনকে এশিয়ান সেশনও বলা হয়ে থাকে। টোকিও হল এশিয়ার অর্থনৈতিক রাজধানী এবং জাপান বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ফরেক্স ট্রেডিং সেন্টার।
এশিয়ান সেশনে গড় পিপ মুভমেন্ট নিচে দেয়া হলো:
টোকিও সেশনের কিছু বৈশিষ্ট্য যা আপনার জানা উচিত:
1. লেনদেন শুধু জাপানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। প্রচুর পরিমানে ফরেক্স লেনদেন অন্যান্য ফাইনান্স্যিয়াল হটস্পটে হয়ে থাকে যেমন: হংকং, সিঙ্গাপুর এবং সিডনি।
2. প্রধান অংশগ্রহণকারী দল হলো, কমার্শিয়াল কোম্পানি (এক্সপোর্টার) এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো।
3. মাঝে মাঝে মার্কেটে তারল্য/লিকুইডিটি খুব অল্প থাকে। এমনও সময় যাবে যখন আপনাকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে একটা সুযোগ পাওয়ার জন্য।
4. এই সেশনে আপনি AUD/USD এবং NZD/USD বেশী উঠানামা দেখবেন।
5. অল্প তারল্য/লিকুইডিটি থাকাকালীন সময় কারেন্সী একটা রেঞ্জের মধ্যে উঠানামা করে। এটা রেঞ্জ ট্রেড অথবা ব্রেকআউট ট্রেডের সুযোগ দিয়ে থাকে।
6. বেশিরভাগ মুভমেন্ট সেশনের শুরুর দিকে দেখা যায় যখন অর্থনৈতিক সংবাদ প্রকাশ হয়।
7. টোকিও সেশনের মুভমেন্ট মূলত সারাদিনের মুভমেন্টের ধারণা দিতে পারে। ট্রেডাররা টোকিও সেশনের মুভমেন্ট দেখে সারাদিনে কিভাবে ট্রেড করবে তার ধারণা দিতে পারে।
8. সাধারণত যদি নিউইয়র্ক সেশনে বড় মুভ হয় তাহলে টোকিও সেশন শিথিল দেখা যেতে পারে।
## লন্ডন সেশন (London Session)
ঠিক যখন এশিয়ান মার্কেট বন্ধের জন্য প্রস্তুতি নেয়, তখন ইউরোপিয়ান মার্কেট দিন শুরু করে। ইউরোপে অনেক বানিজ্যিক কেন্দ্র থাকা সত্ত্বেও লন্ডনের দিকে সবাই নজর রেখে থাকে। ঐতিহ্যগত ভাবে, লন্ডন সর্বদাই বানিজ্য কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয় এর স্ট্রাটেজিক অবস্থানের কারণে।
লন্ডন সেশন সম্পর্কে কিছু তথ্য:
1. লন্ডন সেশন আরো দুটি বড় বানিজ্যিক সেশনের সাথে মিলিত হয়, তাই অনেক মোটা অঙ্কের লেনদেন এই সেশনে সম্পন্ন হয়।
2. অনেক বেশি লেনদেন এই সেশনে সম্পন্ন হয় বলে এই সেশনটা সবচেয়ে প্রাণবন্ত।
3. বেশিরভাগ ট্রেন্ড এই সেশনে স্থাপিত হয় এবং নিউইয়র্ক সেশনে আরো বিস্তার করে।
4. সেশনের মধ্যভাগে তারল্য/লিকুইডিটি কম দেখা দিতে পারে, কারণ ট্রেডাররা নিউইয়র্ক সেশনের খোলার অপেক্ষায় থাকতে পারে।
5. মাঝে মাঝে ট্রেন্ড বিপরীতমুখীও হতে পারে, কারণ লন্ডন সেশনের ট্রেডাররা তাদের লাভ আগেই নির্ধারিত করে রাখতে পারে।
## নিউ ইয়র্ক সেশন (New York Session)
নিউইয়র্ক সেশন মূলত সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয়ে রাত ২টায় শেষ হয় তবে ঋতু পরিবর্তনের সময় ১ঘন্টা আগে চলে আসে এই সময় । ইউরোপ ও এশিয়া সেশনের মতো নিউইয়র্ক সেসন বানিজ্যিক কেন্দ্র যাতে মার্কেট নজর রাখে এবং এই সেসন শুরুর দিকে মার্কেটে মুভমেন্ট বেশি থাকে । নিউইয়র্ক সেশনের এভারেজ মুভমেন্ট নিচের দেয়া হলো:
1. বেশিরভাগ অর্থনৈতিক খবর সেশনের শুরুর দিকে প্রকাশিত হয়।
2. ইউরোপিয়ান সেশন শেষ হয়ে গেলে নিউইয়র্ক সেশনের মাঝের দিকে মার্কেটে শিথিলতা নামতে দেখা যেতে পারে।
3. শুক্রবারে মার্কেট অপ্রত্যাশিত মুভমেন্ট দেখা যেতে পারে, কারণ মার্কেট বন্ধ হয় এই দিন , অনেক গুলো মেজর নিউজ রিলিজ এই এই দিন এবং অনেক ট্রেডাররা ট্রেড ক্লোজ করে দেয় সাপ্তাহিক ক্লোজিং এর আগেই।
## সেশন ওভারল্যাপ (Session Overlaps)
যখন বেশি ট্রেডাররা মার্কেটে উপস্থিত থাকে, তখন মার্কেটে লিকুইডিটি বা তারল্য বেশি থাকে। সাধারণত আপনি চিন্তা করবেন যে যখন দুটি সেশন সম্মিলিত হয় তখন মার্কেটে বেশি ট্রেডার থাকে। চলুন দেখি কেন:
### টোকিও লন্ডন ওভারল্যাপ (Tokyo London Overlap)
বেশকিছু কারণে এই সেশনে লিকুইডিটি কম দেখা যেতে পারে। টোকিও সেশনের শেষের দিকে সাধারণত তেমন মুভমেন্ট থাকে না আর লন্ডন সেশন মাত্র শুরু হয় তাই তারল্য অনেক কমে যায়। এই সময়ে আপনি লন্ডন ও নিউইয়র্ক সেশনে ট্রেড করার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন।
### লন্ডন নিউইয়র্ক ওভারল্যাপ (London-New York Overlap)
আসল মুভমেন্ট এই সময় শুরু হয়। যেহেতু এই সময় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুটি ফাইনান্সিয়াল সেন্টার একত্রে সম্মিলিত হয়। আর ট্রেডাররাও এই সময় প্রস্তুত থাকে যেহেতু এটা দিনের সবচেয়ে ব্যস্ততম সময়।
এই সময়ে ইউএস, কানাডা এবং ইউরোপীয়ান খবর প্রকাশিত হয় তাই মার্কেটে বড় মুভমেন্ট দেখা যেতে পারে। যদি ইউরোপীয়ান সেশনে কোন ট্রেন্ড প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে তাহলে সেটা এই সেশনে সেই ট্রেন্ড বিস্তার করতে পারে। এর কারণ হলো, ইউএস সেশনের ট্রেডাররা মার্কেটে প্রবেশ করে আর ট্রেন্ড আরো প্রসারিত হয়। এই সেশনের শেষের দিকে ইউরোপীয়ান ট্রেডাররা তাদের ট্রেড বন্ধ করে দেয় যা মার্কেটে শিথিলতা আনতে পারে।
Add a Comment
You must be logged in to post a comment